ব্যবসা করতে গেলে যে সমস্ত ভুল আমরা করে থাকি

আপনি যদি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে থাকেন, এবং আপনি বর্তমানে যে ব্যবসা চালু করেছেন কিংবা যে ব্যবসা নিয়ে কাজ করছেন তাতে যদি সফল হতে চান, তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারবেন কিছু কারণ সম্পর্কে যে সমস্ত কারণে অনেকেই সফল হতে পারে না।

কারণ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে এরকম অনেক রকমের মিসটেক রয়েছে যে সমস্ত মিস্টেক করার কারণে একটি ব্যবসা সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পরেও সেটি ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কাজেই আমাদেরকে সর্বপ্রথম এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

এছাড়া এই সমস্ত বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে কোন একটি বিষয় যদি আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এই সমস্ত বাধা থেকে কিভাবে আমরা মুক্তি পাবেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন।

ব্যবসার করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত ভুল হতে পারে

আমরা যখন একটি ব্যবসা করি তখন সেই ব্যবসার মধ্যে বিভিন্ন রকমের ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে। এবং আমাদের করা এই সমস্ত ভুলভ্রান্তির কারণে আমাদের যে সমস্ত অডিয়েন্স রয়েছে তারা মনোযোগ হারাতে পারে।

দেখা দিতে পারে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে ব্র্যান্ড সিগন্যাল রয়েছে সে ব্র্যান্ড সিগন্যাল, হ্রাস পেতে পারে। সেজন্য ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত ভুল আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

  • সঠিকভাবে বাজার বিশ্লেষণ না করা।
  • দাম নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বাজার বিশ্লেষণ না করা।
  • প্রোডাক্টের গুণগতমান সম্পর্কে আলাকপাত না করা।
  • প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন ভালোভাবে না করা।
  • কাস্টমারের ফিডব্যাক না নেয়া।
  • বিভিন্ন বিভিন্ন প্রোমোশনাল অফার চালু না করা।
  • প্রয়োজন এর দিকে নজর না করে প্রোডাক্ট তৈরি করা।
  • কাস্টমার কেয়ার সম্পৃক্ত না করা। ইত্যাদি।

উপরে যে সমস্ত বিষয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো ভালো একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে করা ভুলের মধ্যে থেকে অন্যতম কিছু যার কারণে আপনার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এবার এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সঠিকভাবে বাজার বিশ্লেষণ না করা

যে কোন একটি ব্যবসা থেকে সফলতা পাওয়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম এবং প্রধানত যে কাজটি করতে হয় সেটি হল সঠিকভাবে বাজার বিশ্লেষণ করা।

অর্থাৎ বর্তমান সময়ে মার্কেটে যে সমস্ত প্রোডাক্ট রয়েছে সে সমস্ত প্রোডাক্টের যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারবেন। এবং এরকম কিছু প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারবেন যা আপনার কাস্টমারের সমস্যা দূরীকরণে সহায়ক হবেন।

এরকম অনেক বিজনেস হোল্ডার রয়েছেন যারা কিনা, বাজার বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় অনিহা প্রকাশ করেন। এটি করা কখনোই উচিত নয়। বরং আপনাকে সার্বক্ষণিক বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রোডাক্ট তৈরি করতে হবে এবং বিক্রি করতে হবে।

দাম নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বাজার বিশ্লেষণ না করা

এরকম অনেক বিজনেসম্যান রয়েছে যারা কিনা তাদের প্রোডাক্টের আকাশচুম্বী দাম নির্ধারণ করে রেখে দেন। যেখানে দেখা যায় অন্য একটি দোকান থেকে সেই একই পণ্য ২০ টাকা দিয়ে ক্রয় করা যায় সেখানে ওই ব্যক্তির দোকান থেকে সেটি ক্রয় করতে হলে ৫০ টাকা খরচ করতে হয়।

কাস্টমার যেই দোকান থেকে কম দামে সেই পণ্যটি ক্রয় করতে পারে সেখানে দিকে ঢুকে যায়। সেজন্য, যে কোন একটি প্রোডাক্টের দাম নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান বাজার মূল্যের দিকে নজর রাখবেন।

তবে এর বিপরীত চিত্র অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। অনেকেই দেখা যায় পণ্যের দাম কমাতে কমাতে একেবারেই কমিয়ে ফেলেন। আপনি যদি পণ্যের দাম প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কমিয়ে ফেলেন তাহলে বিশ্বস্ততা কমে যেতে পারে।

এবং পণ্যের দাম একেবারে কমিয়ে ফেলার পরে অনেকেই আপনার দোকান থেকে কিংবা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করতে অনিয়া প্রকাশ করতে পারে। কাজেই, বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের দাম নির্বাচন করতে হবে। খুব বেশি দাম নির্ধারণ করা যাবে না আবার খুব কম নির্ধারণ করা যাবে না৷

প্রোডাক্টের গুণগতমান সম্পর্কে আলাকপাত না করা

যে কোন প্রোডাক্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রোডাক্ট এর গুণগত মানের দিকে নজর রাখবেন৷ যে কোন একটি পণ্যের গুণগত মান যত বেশি থাকবে সেই পণ্যের জনপ্রিয়তা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং একই সাথে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড সিগন্যাল বৃদ্ধি পাবে।

কাজেই এরকম প্রোডাক্ট তৈরি করুন যা লোকজনের কাজে আসবে। এবং যে কেউ এই সমস্ত প্রোডাক্ট ক্রয় করতে চাইবে।

প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন ভালোভাবে না করা

কোন একটি নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করার পরে অবশ্যই সেই প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন তৈরি করবেন। অর্থাৎ নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করার পরে এর কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রচারণা চালাতে পারেন।

এতে করে লোকজন প্রোডাক্ট এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তারা যদি এটা মনে করে আপনি যে পণ্য বিক্রি করছেন সেই পণ্য তাদের সমস্যা সমাধানের সহায়ক হবে তাহলে তারা সেই পণ্য ক্রয় করে নিতে পারে।

সেজন্য নতুন পণ্য তৈরি করার পরে অবশ্যই সেই পণ্যের প্রমোশন করুন।

কাস্টমারের ফিডব্যাক না নেয়া

কোন একটি প্রোডাক্ট যখন আপনি মার্কেটে ছাড়বেন তখন সেই প্রোডাক্ট মার্কেটে ছাড়ার পরে আপনাকে অবশ্যই আপনার কাস্টমারের ফিডব্যাক নিতে হবে।

সে ক্ষেত্রে কাস্টমারের কাছ থেকে জানতে পারেন প্রোডাক্ট এর গুণগত মান সম্পর্কে কিংবা এই প্রোডাক্ট ক্রয় করার পরে তারা কি কি রকমের সুবিধা উপভোগ করছে অথবা এই প্রোডাক্ট এর মধ্যে তারা কি কি রকমের অসুবিধা লক্ষ্য করছে।

এ সমস্ত বিষয়গুলো যদি কাস্টমারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন তাহলে কাস্টমারের বিশ্বস্ততা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং পরবর্তীতে আপনার প্রোডাক্ট ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।

বিভিন্ন বিভিন্ন প্রোমোশনাল অফার চালু না করা

মাঝেমধ্যে আপনি যেই প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন সে সমস্ত প্রোডাক্টের প্রমোশনাল অফার চালু করে রাখুন। অর্থাৎ প্রোডাক্ট বিক্রি করার ক্ষেত্রে নানা রকমের ডিসকাউন্ট দিতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি যদি যেকোন একটি প্রোডাক্ট বিক্রি করার ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট দেন তাহলে সেটি বিক্রি করার প্রবণতা পুর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। কোন একটি পণ্যের ডিসকাউন্ট দেয়ার ক্ষেত্রেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।

আপনি যদি বেশি ডিসকাউন্ট দিয়ে দেন তাহলে সেটি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডিসকাউন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন এবং একই সাথে যাতে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেরকম ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে নজর আরোপ করবেন।

প্রয়োজন এর দিকে নজর না করে প্রোডাক্ট তৈরি করা

আপনি যখনই কোন একটি প্রোডাক্ট তৈরি করবেন তখন সেই প্রোডাক্ট তৈরি করার পূর্বে চিন্তা করে নিবেন সেই প্রোডাক্ট প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম কিনা। অর্থাৎ আপনি যেই উদ্দেশ্যে এই প্রোডাক্ট তৈরি করছেন কাস্টমারের যে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই প্রোডাক্ট তৈরি করছেন সেই প্রোডাক্ট কি আসলেই কাস্টমারের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে কিনা সেই সম্পর্কে নজর রাখুন।

এবং যখন আপনি এরকম কোন প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারবেন যে সমস্ত প্রোডাক্ট আসলেই কাস্টমারের মন জয় করতে পারবে এবং সাথে কাস্টমারের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তখনই আপনার সেই প্রোডাক্ট বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।

সে ক্ষেত্রে হয়তো বা আপনি দুই একবার ফেল হতে পারেন কিন্তু লেগে থাকতে হবে। তাহলে আপনি এর থেকে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

কাস্টমার কেয়ার সম্পৃক্ত না করা

এরকম অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কিনা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কোন রকমের কাস্টমার কেয়ার সেবা চালু রাখেনা। কাস্টমার কেয়ার সেবা বলতে বুঝানো হয়েছে যখন কাস্টমার কোন একটি পণ্য নিয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়বে কিংবা সেটি তাদের মন অনুযায়ী না হবে তখন তারা সেই অভিযোগ যার কাছে জানাবে।

এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাস্টমার সেবা চালু করে রাখেন তাহলে কাস্টমারের বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি পাবে। এবং যখন কাস্টমার কোন একটি প্রোডাক্ট নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়বে, তখন সে সহজেই কাস্টমার কেয়ারে কল করার মাধ্যমে তার মতামত কিংবা অভিযোগ জানাতে পারবে।

যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করার জন্য কাস্টমার কেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিজনেসে মিসটেক হতে বাঁচার জন্য কিছু পরামর্শ:

এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক বিজনেস মিস্টেক থেকে বা বেঁচে থাকার জন্য কিছুর জনপ্রিয় পরামর্শ সম্পর্কে। যার মাধ্যমে আপনি বিজনেস মিসটেক থেকে বিরত থাকতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসা সফল করতে পারবেন৷

সর্বপ্রথম ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা গ্রহণ করুন এবং সত্যতায় বিশ্বাসী থাকুন। সব সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করবেন।

কাস্টমারের মন্তব্য এবং তাদের যে প্রতিক্রিয়া রয়েছে সেটি গ্রহণ করুন। এবং সেই অনুযায়ী পণ্যের মান উন্নত করুন।

আপনি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত কর্মীদের নিয়োগ দিবেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিন। এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে সহায়ক করে তুলুন।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য আপনি চাইলে জনবল নিয়োগ দিতে পারেন এবং তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।

উপরে যে সমস্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হল বিজনেস মিস্টেক থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু উপায় কিংবা কিছু পরামর্শ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top